-->

বঙ্কিমচন্দ্রের 'কমলাকান্তের দপ্তর' প্রবন্ধগ্রন্থের 'বিড়াল' প্রবন্ধের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর:

বঙ্কিমচন্দ্রের 'কমলাকান্তের দপ্তর' প্রবন্ধগ্রন্থের  'বিড়াল' প্রবন্ধের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর
বঙ্কিমচন্দ্রের 'কমলাকান্তের দপ্তর' প্রবন্ধগ্রন্থের  'বিড়াল' প্রবন্ধের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর:

প্রশ্ন: “তখন চক্ষু চাহিয়া ভালো করিয়া দেখিলাম যে, ওয়েলিংটন নহে”-কেন  প্রবন্ধের অংশ? চোখ চেয়ে কে, কী দেখেছিল?

উত্তর: উক্ত অংশটি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ নামক গ্রন্থের বিড়াল প্রবন্ধের অংশ। এখানে নেশাগ্রস্ত কমলাকান্ত নেশায় বিভোর হয়ে কল্পনার জগতে পাড়ি দিয়েছিলেন। সেই সময় বিড়ালের ডাকে চোখ চেয়ে কমলাকান্ত দেখলেন একটি বিড়াল তার জন্য রাখা দুধের প্রায় সবটুকু অংশ শেষ করে পরম আনন্দে তার সুখের কথা জগতকে জানানোর জন্য মধুর স্বরে ডাক দিচ্ছে।

প্রশ্ন: “ইহাও বাঞ্ছনীয় নহে”—অংশটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে? কী বাঞ্ছনীয় নয়?

উত্তর: আলোচ্য অংশটি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ নামক গ্রন্থের ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের অংশ।

‘বিড়াল’ প্রবন্ধে লেখক সমাজের সাম্যবাদের দিকটি তুলে ধরেছেন। তিনি প্রবন্ধে ধনী ও দরিদ্রের শ্রেণি বৈষম্যের তুলনা করেছেন। সমাজের ধনী সম্প্রদায় যেমন কারণ অকারণে দরিদ্রের উপর অত্যাচার করে। এখানে কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধ বিড়াল খাওয়ার পর কমলাকান্ত যদি তাকে না মারে তাহলে তার সম্মান হানি হবে। তাই সম্মান বাঁচানোর জন্য বিড়ালকে মারার প্রয়োজন। এর মধ্য দিয়ে লেখক ধনী দরিদ্রের শ্রেণি বৈষম্য ও তাদের মধ্যে শোষণ পীড়নের সম্পর্ককে প্রকাশ করেছেন।

প্রশ্ন: “বুঝিলাম যে, বিড়াল বলিতেছে”-বিড়াল কখন কি বলেছিল?

উত্তর: কমলাকান্তের ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে বিড়াল কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধ খেয়ে নেওয়ায় লেখক তাকে শাস্তি দিতে উদ্ধত হয়েছিল। সেই সময় বিড়াল তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিল এই সংসারের সকলেরই ক্ষুধা-তৃষ্ণা আছে। মানুষ এবং বিড়াল উভয়েরই শারীরিক নিয়ম অনুযায়ী খিদে পায়, মানুষরা খেলে ক্ষতি নেই আর তারা খেলেই দোষ। লেখক এই প্রসঙ্গে ধনী-দরিদ্রের শ্রেণি বৈষম্য আর অর্থ বৈষম্যের কথা বলতে চেয়েছেন।

প্রশ্ন: ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্রের মূল বক্তব্য কী?  

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র তার এই প্রবন্ধটির মধ্য দিয়ে সমাজের শ্রেণি বৈষম্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং তার ফলে সমাজের একশ্রেণির মানুষের দ্বারা অপর এক শ্রেণির শোষণ, নিপীড়নের কথা বোঝাতে চেয়েছেন। এই প্রবন্ধে দেখা গেছে বিড়ালের খাবার কোনো অধিকার নেই, খেতে গেলে তাকে মারার জন্য তেড়ে আসে মানুষ সেইরকমই সমাজের পুঁজিপতিদের পুঁজির যে মূল উৎপাদক সেই শ্রমিকদের পরিশ্রমে যে পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে তাতে তাদের অধিকার নেই এর ফলে শ্রেণি বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। বঙ্কিমচন্দ্র বিড়াল ও কমলাকান্তের উত্তর প্রত্যুত্তরের মধ্য দিয়ে ধনতন্ত্রের অনিবার্য কুফল ও সমাজতন্ত্রের কল্যাণময় দিকটি পাঠকদের কাছে তুলে ধরেছেন।

প্রশ্ন: ‘ম্যাও’ ডাক প্রথমবার শোনার পর লেখকের কি মনে হয়েছিল?

উত্তর: কমলাকান্ত যখন নেশার ঘোরে চোখ বন্ধ করেছিল তখন সে নেপোলিয়ন ও ওয়েলিংটন নিয়ে ভাবছিল, তারই মধ্যে বিড়াল ডেকে উঠল। প্রথমবার লেখক বুঝতে পারছিলেন না কিসের ডাক। পরে মনে ভাবতে লাগলেন ওয়েলিংটন হঠাৎ বিড়ালত্ব প্রাপ্ত হয়ে তার নিকট আফিম চাইতে এসেছে।

প্রশ্ন: বিড়াল তার চুরির কি কারণ দেখিয়েছে?

উত্তর: ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের বিড়াল কমলাকান্তকে বলেছে, খেতে পেলে কেউ চুরি করে না, সে নিজের ইচ্ছায় চুরি করেনি। যাদের অপর্যাপ্ত ধন আছে তাদের চুরি করার প্রযোজন পড়ে না। আর যাদের নেই তাদের দু মুঠো অন্নের জন্য চুরি করতে বাধ্য হয়।

প্রশ্ন: “পরোপকারই পরম ধর্ম”—অংশটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে? উক্তিটি কে কাকে করেছে? পরোপকারকে কেন পরম ধর্ম বলা হয়েছে?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ নামক গ্রন্থের ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের অংশ বিশেষ।

‘বিড়াল’ প্রবন্ধে লেখক সমাজের শ্রেণি বৈষম্য ও অর্থ বৈষম্যের দিকটি তুলে ধরেছেন। কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধ বিড়াল খেয়ে ফেললে তাকে কমলাকান্ত লাঠি দিয়ে মারতে গেলে বিড়াল থামিয়ে দেয়। বিড়াল নিজের অধিকারের কথা বলে। বিড়াল বলে মানুষের ধর্ম পরোপকার করা। কমলাকান্তের দুধ বিড়াল খেয়ে নেওয়ায় কমলাকান্তের পরোপকার সিদ্ধ হল এবং পরম ধর্মের ফলভাগী হল।


প্রশ্ন: “চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ ধনী তদপেক্ষা শত গুণে দোষী’—তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তর : আলোচ্য অংশটি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ গ্রন্থের ‘বিড়াল’ নামক প্রবন্ধ থেকে গৃহীত।

‘বিড়াল’ প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র সমাজের অসম ধনবণ্টন ও শ্রেণি বৈষম্যের কথা বলেছেন কমলাকান্ত ও বিড়ালের কথোপকথনের রূপকে। তিনি বলতে চেয়েছেন সমাজে ধনের অসম বণ্টনের জন্য ধনীর ঘরে প্রয়োজনাতিরিক্ত ধন সঞ্চিত হয়, আর তার ফলে দরিদ্র শ্রেণির সৃষ্টি হয়। দরিদ্ররা তাদের অন্ন জোটানোর জন্য বাধ্য হয় চুরি করতে। বঙ্কিমচন্দ্র এই প্রবন্ধের দরিদ্র শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে বলেছেন চুরির প্রধান কারণ অপর্যাপ্ত ধন ধনীদের কুক্ষিগত করা, কিন্তু তাদের দোষ হয় না, দোষ হয় চোরের।

প্রশ্ন: ‘তোমাদের পেট ভরা, আমার পেটের ক্ষুধা কি প্রকারে জানিবে!'—কে কাকে বলেছিল? কি কারণে একথা বলেছিল?

উত্তর : আলোচ্য অংশটি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ নাম গ্রন্থের ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের অংশ।

এই প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র সমাজের শ্রেণি বৈষম্য, শ্রেণিবিদ্বেষ ও ধনের অসম বণ্টনের কথা বলেছেন। সমাজে যারা ধনী সম্প্রদায় তারা কৃপণ ও স্বার্থান্ধতায় সংকীর্ণচেতা। পরের দুঃখে কাতর হওয়া তাদের প্রকৃতিবিরুদ্ধ। তারা নিজেদের নিয়ে সুখী থাকতে চায়। তারা তাদের উদ্বৃত্ত খাবার ফেলে দেয়, নষ্ট করে, অথচ তা দিয়ে দরিদ্রদের প্রতিপালন করা বা তাদের দুঃখ তারা বুঝতে পারে না।

প্রশ্ন: ‘তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্যজাতির রোগ’—তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তর : আলোচ্য অংশটি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ নামক গ্রন্থের ‘বিড়াল’  নামক প্রবন্ধের অংশ।

এই প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র কমলাকান্তের রূপকে সমাজের ধনী সম্প্রদায়ের কথা ও শ্রেণিবিদ্বেষ, ধন বৈষম্যের কথা বলেছেন। এই সমাজে যাদের অধিক আছে তাদের তোষামোদ ও খুশি করে সবাই নিজের কাজ হাসিল করতে চায়। তাদের থাকলেও নানা উপহার তাদের দেওয়া হয়। কিন্তু যারা সর্বহারা দরিদ্র তাদের দুঃখ বোঝার জন্য কেউ ব্যস্ত নয়। বঙ্কিম এখানে মানুষের স্বার্থলোভীরূপের দিকটি পরিস্ফুট করেছেন।

প্রশ্ন: কোন বিড়ালরা সুখী হয়?

উত্তর : ‘বিড়াল' প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র বিড়ালরূপী দরিদ্র মানুষদের দুর্দশার কথা বলেছেন। এরা খিদে মেটাতে চুরি করে। বড়লোকেরা নিজেদের নিয়ে সুখী থাকে দরিদ্রদের কথা ভাববার চেষ্টা করে না। এরা নিজেদের উচ্ছিষ্ট ফেলে দেয় কিন্তু গরীবদের দেয় না। কিন্তু যারা গৃহমার্জার হয় অর্থাৎ গৃহে প্রতিপালিত হয় যেমন বৃদ্ধের কাছে যুবতীর ভাই, মূর্খ ধনীর কাছে দাবার খেলোয়াড় ইত্যাদি ব্যক্তিরাই সুখী হয়।

প্রশ্ন: ‘এ পৃথিবীর মৎস্য মাংসে আমাদের কিছু অধিকার আছে'—এই কথার মাধ্যমে বঙ্কিমচন্দ্র কি বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর : বঙ্কিমচন্দ্র এই প্রবন্ধে ধনী ও দরিদ্র সম্প্রদায়ের মধ্যে শ্রেণি বৈষম্য ও ধন বৈষম্যের কথা ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া তিনি এতে এই সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সর্বকালীন বিবাদ তা প্রকট করেছেন। যারা সর্বহারা তারা সকল বিষয় থেকে বঞ্চিত হয়ে, কোনো মতে দিন যাপন করাকেই ভাগ্য মেনে নিতে পারে না—মানুষের মতো বাঁচবার দাবিই তাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে। একথাই বঙ্কিমচন্দ্র কমলাকান্ত ও বিড়ালের কথোপকথনের রূপকে প্রকাশ করেছেন।


প্রশ্ন: ‘তখন চক্ষু চাহিয়া ভালো করিয়া দেখিলাম যে ওয়েলিংটন নহে'—কোন | প্রবন্ধের অংশ? কে চোখ চেয়ে কাকে এবং কি দেখেছিল?

উত্তর : আলোচ্য অংশটি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ নামক গ্রন্থের ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের অংশ।

এখানে নেশাগ্রস্ত কমলাকান্ত নেশার ঘোরে বিড়ালের ডাক শুনে নানা অবাস্তব ঘটনা কল্পনা করতে থাকে। পরে ভালো করে চোখ মেলে দেখতে পায় একটি বিড়াল তার জন্য রাখা দুধের সবটুকু উদরসাৎ করে পরম তৃপ্তিতে তার সুখের কথা জগতকে জানানোর জন্য মধুর স্বরে ডাক দিচ্ছে।

প্রশ্ন: ‘আমি তোমার ধর্মের সহায়’-কে, কাকে, কেন বলেছিল?

উত্তর: আলোচ্য অংশটি ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের অংশ। এখানে এই কথাটি বিড়াল কমলাকান্তকে বলেছিল। বঙ্কিমচন্দ্র কমলাকান্ত ও বিড়ালের রূপকে যথাক্রমে ধনী ও দরিদ্র মানুষের চিত্র তুলে ধরেছেন। প্রবন্ধে বিড়াল কমলাকান্তের দুধ খেয়ে নেওয়ায়  কমলাকান্ত তাকে মারতে যায়। তখন বিড়াল তাকে থামিয়ে বলে এই যে তার দুধ বিড়াল খেয়েছে তাতে তার পরোপকার ধর্ম সাধন হয়েছে এবং এতে সে পরম ধর্ম ফলভাগী হয়েছে। বিড়াল চুরি করলেও সে কমলাকান্তের ধর্মের সহায় হয়েছে।

প্রশ্ন: ‘ধনবৃদ্ধি ব্যতীত সমাজের উন্নতি নাই’—কোন প্রবন্ধের অংশ? কে কাহাকে বলেছিল? এর উত্তরে বিড়াল কি বলেছিল?

উত্তর: আলোচ্য অংশটি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ গ্রন্থের ‘বিড়াল’ প্রবন্ধ থেকে গৃহীত। উক্তিটি কমলাকান্ত বিড়ালকে বলেছিল।

যখন ধনী ও দরিদ্রের অধিকার নিয়ে ধনীর প্রতীক কমলাকান্ত ও দরিদ্রের প্রতীক রূপে বিড়ালের তর্ক চলছিল তখন বিড়ালকে বোঝানোর জন্য কথাটি বলেছিল। এর উত্তরে  বিড়াল বলেছিল সে যদি খেতেই না পায় তাহলে সমাজের উন্নতি হলেও তাতে তার কিছু যায় আসে না।

প্রশ্ন: ‘তোমার কথাগুলি ভারি সোসিয়ালিস্টিক'-কে কাকে বলেছিল? ‘সোসিয়ালিস্টিক কথাটির অর্থ কী? এর ফলে কী হয়?

উত্তর: আলোচ্য অংশটি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ গ্রন্থের ‘বিড়াল’ প্রবন্ধ থেকে গৃহীত। উক্তিটি কমলাকান্ত বিড়ালকে বলেছিল।

সোসিয়ালিস্টিক কথার অর্থ সমাজ সম্পৰ্কীয় তন্ত্র। এর ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়।

প্রশ্ন: ‘চোরের দণ্ডবিধান কর্তব্য’—এ কথাটি কে বলেছিল? এর উত্তরে কে কি যুক্তি দিয়েছিল?

উত্তর: উপরিউক্ত কথাটি কমলাকান্তের উক্তি।

এর উত্তরে ‘বিড়াল’ বলেছিল চোরকে দণ্ড দেওয়াতে তার কোনো আপত্তি নেই কিন্তু এর সঙ্গে আর একটি নিয়ম করতে হবে—যিনি চোরকে দণ্ড দেবেন তাকে আগে তিনদিন উপবাস করে থাকতে হবে। যদি তাতে তার চুরি করে খাবার প্রবৃত্তি না জাগে তাহলে তিনি চোরকে স্বচ্ছন্দে ফাঁসি দিতে পারেন না। এমনকি সে কমলাকান্তকেও একই প্রস্তাব করেছিল যে সে যদি তিনদিন উপবাসের মধ্যে ভাঁড়ার ঘরে ধরা না পড়ে তাহলে সে নির্দ্বিধায় বিড়ালকে মারতে পারে।

প্রশ্ন: ‘বিজ্ঞলোকের মত এই যে’—কোন প্রবন্ধের অংশ? বিজ্ঞলোক কি মত দেন?

উত্তর: আলোচ্য অংশটি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ নামক গ্রন্থের ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের অংশ।

বিজ্ঞলোকের মত এই যে যখন বিচারে পরাস্ত হবে তখন গম্ভীরভাবে উপদেশ প্রদান করবে। কমলাকান্ত বিড়ালকে পরাস্ত করতে না পেরে উপদেশ দিয়েছিল।

প্রশ্ন:  ‘চোরের দণ্ডবিধান কর্তব্য’—এ কথাটি কে বলেছিল? এর উত্তরে কে কি যুক্তি দিয়েছিল?

উত্তর: ‘বিড়াল’ প্রবন্ধে বঙ্কিম ধনতান্ত্রিক সমাজের ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ভয়ঙ্কর শ্রেণি-বৈষম্য ও শ্রেণি বিদ্বেষের কথা বলেছেন। বিড়াল যখন তার অধিকারের কথা বলতে লাগলো তখন কমলাকান্ত তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিল যার ক্ষমতা আছে সে যদি ধন সঞ্চয় করতে না পারে বা চোরের জ্বালায় নির্বিঘ্নে ভোগ করতে না পারে তবে কেউই আর ধন সঞ্চয় করবে না, এর ফলে সমাজে ধন বৃদ্ধি হবে না।


প্রশ্ন: বিজ্ঞলোকের মতানুসারে কমলাকান্ত কি উপদেশ দিয়েছিল?

উত্তর: বিড়াল প্রবন্ধে কমলাকান্ত বিজ্ঞলোকের মতানুসারে বিড়ালকে তর্কে হারাতে না পেরে উপদেশ দিয়েছিল। তাকে কমলাকান্ত বলেছিল, তার কথাবার্তাগুলি হল নীতিবিরুদ্ধ কথা, এর আন্দোলনেও পাপ আছে। সে তাকে এই সব দুশ্চিন্তা ত্যাগ করে ধর্মাচরণের দিকে মন দিতে বলেছে। প্রয়োজনে তাকে কিছু পার্কার ও নিউমান-এর বইও দিতে পারে।

প্রশ্ন: কমলাকান্ত বিড়ালকে উপদেশের সঙ্গে আর কি দিতে চেয়েছিল?

উত্তর: কমলাকান্ত বিড়ালকে যুক্তিতর্কে পরাজিত করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত তাকে উপদেশ দিতে শুরু করে। এবং শেষমেশ তাকে ছানা এবং এক সরিষা আফিম দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এখানে কমলাকান্তরূপী বঙ্কিমচন্দ্র উচ্চ সমাজের মানুষের ঘুষ দেওয়ার প্রবণতাকে চিত্রিত করেছেন।

প্রশ্ন: বিড়াল চলে যাবার পর কমলাকান্ত কি ভেবেছিল?

উত্তর : বিড়াল চলে যাবার পর কমলাকান্ত এই ভেবে আনন্দিত হয়েছিল যে সে একজন পতিত আত্মাকে অন্ধকার থেকে আলোয় এনেছে।

সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা তাদের কাজকে মহৎ কাজ বলে মনে করে। যুক্তিতর্কে যখন তারা অপর পক্ষকে পরাজিত করতে পারে না তখন তাদের উপদেশ দেয়। এবং এটাকে একটা মহৎ কাজ মনে করে আত্মতুষ্টি লাভ করে। বঙ্কিমচন্দ্র এই শ্রেণির কথাই এখানে বলতে চেয়েছেন।

প্রশ্ন: ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের অন্তরালে বঙ্কিমচন্দ্রের কি বক্তব্য ব্যক্ত হয়েছে?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের মধ্যে দিয়ে ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের স্বরূপটি পাঠকের কাছে উদ্ঘাটিত করতে প্রয়াসী হয়েছেন। বর্তমান জগতে সম্পদের উৎপাদন ও বণ্টনের বৈষম্যের কারণে পৃথিবীর মানুষ দুটি শ্রেণিতে ভাগ হয়ে গেছে। পুঁজিপতি ও শ্রমজীবী। পুঁজিপতিদের পুঁজির যে মূল উৎপাদক সেই শ্রমিকদের পরিশ্রমে যে পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে তাতে তাদের অধিকার নেই, এর ফলে শ্রেণি বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। আলোচ্য প্রবন্ধে বিড়াল সমানাধিকারবাদী দলের প্রতিভূ আর কমলাকান্ত পুঁজিবাদের প্রতিভূ। বঙ্কিমচন্দ্র বিড়াল ও কমলাকান্তের উত্তর প্রত্যুত্তরের মধ্য দিয়ে ধনতন্ত্রের অনিবার্য কুফল ও সমাজতন্ত্রের কল্যাণময় দিকটি পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন।