-->

ট্র্যাজেডি নাটক রচনায় উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের অবদান

কমেডির মত ট্র্যাজেডিও প্রাচীন গ্রীসে উদ্ভূত নাট্যরূপ। ট্র্যাজেডির সম্পর্কে প্রথম উল্লেখযোগ্য তাত্ত্বিক আলোচনা করেছিলেন প্রখ্যাত গ্রীক দার্শনিক এ্যারিস্টটল তার বিখ্যাত পোয়েটিকস’ (Poetics) গ্রন্থে। ট্র্যাজেডির সংজ্ঞা ও চরিত্র বিশ্লেষণে তিনি প্রধানত নির্ভর করেছিলেন প্রাচীন গ্রীসের তিনজন বিখ্যাত নাট্যকার অ্যাসকাইলাস (Aeschylus), সফোক্লিস (Sophocles) এবং ইউরিপিডিস (Euripides) রচিত নাটকগুলির উপর। তার বর্ণনা অনুসারে ট্র্যাজেডি নাটকের বিষয়বস্তু হল সবসময়ই বিষাদাত্মক বা বিয়োগান্তক। ট্র্যাজেডির নায়ক ধীর এবং সংগ্রামী চরিত্রের মানুষ। কিন্তু নাটকের অবসানে তার মৃত্যুই একমাত্র পরিণতি, সে মৃত্যু গৌরবজনকও হতে পারে আবার তার বিনাশ বা ধ্বংসের মাধ্যমেও আসতে পারে। সহজ ভাবে বলতে গেলে ট্র্যাজেডি হল অপ্রতিরোধ্য নিয়তি বা ভাগ্য (Fate) এর বিরুদ্ধে কোন এক বীর প্রতিভাবান, খ্যাতিমান, সংগ্রামী মানুষের অসম লড়াই-এর কাহিনী। তার যন্ত্রণা, শারীরিক, মানসিক, সাংসারিক সব প্রান্ত থেকে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার কাহিনী, আর ধ্বংসাত্মক পরিণতিতেই তার পরিসমাপ্তি। পূর্ণাঙ্গ নাটকের আকারে বিধৃত এই মহত্ত্বপূর্ণ জীবন কাহিনীকাহিনী ও চরিত্রের পারস্পরিক সম্পর্ক, তার ঘাত-প্রতিঘাত, তার করুণ পরিণতি দেখতে দেখতে পাঠক বা দর্শকের মন তার প্রতি করুণায় (Pity) আপ্লুত হবে, অথবা তার করুণ পরিণতিতে ভীতিতে (Fear) সন্ত্রস্ত হয়ে উঠবে। নাটকটি তাই দেখতে দেখতে দর্শক চিত্তে এই দুটি আবেগের যে আলোড়ন উঠবে তাতে অতিরিক্তি যে আবেগের ফল্গুধারা বয়ে আসবে এ্যারিস্টটল তারই নাম দিয়েছেন Cathersisএই আবেগ মোচন বা Purgation ছিল গ্রীক ট্রাজেডির উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য।

ইংরেজি সাহিত্যে ট্র্যাজেডি নাটকের সূত্রপাত ষোড়শ শতাব্দীতে। ইংরেজী ভাষার কমেডি নাটকগুলিতে যেমন ইংলণ্ডেরই প্রাচীন সনাতন ঐতিহ্যমণ্ডিত মিরাকল ও মর‍্যালিটি নাটকগুলির মেলবন্ধন ঘটেছিল, ট্র্যাজেডি নাটকগুলির ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। ইংরেজি নাট্যসাহিত্যের প্রথম ট্র্যাজেডি নাটক ছিল সেনেকার নাট্যরীতির অনুকরণে লিখিত প্রতিশোধ ধর্মী। দীর্ঘ আড়ম্বরপূর্ণ সংলাপ, স্থূল আবেগসর্বস্ব ঘটনাবলী, রক্তপাত, হত্যা, হিংসা-প্রতিহিংসায় পরিপূর্ণ। যা দর্শকদের কাছে সমাদৃতও হয়েছিল। তবে ট্র্যাজেডি নাটকের প্রথম পরিপূর্ণতা নিয়ে এলেন টমাস কিড (Thomas Kyd) তার The Spanish Tragedy নাটকে। তার এই নাটকে নাট্যরীতি ও অভিনয় যোগ্যতা অসাধারণ পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল। পরবর্তী কালে তাকেই আদর্শ করে মার্লো লিখলেন তার The Jew of Malta । এবং শেক্সপিয়ার লিখলেন তার দুটি বিখ্যাত নাটক—Titus Andronicus এবং Hamlet

উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ট্র্যাজেডি নাটকগুলির বিষয়বস্তু

টাইটাস অ্যান্ড্রোনিকাস (Titus Andronicus):

উইলিয়াম শেক্সপিয়ার রচিত ট্র্যাজেডি নাটকগুলির মধ্যে প্রথম নাটক টাইটাস অ্যান্ড্রোনিকাস (Titus Andronicus)সেনেকার Thyestes Troades এর পদ্ধতিকে অবলম্বন করে বীভৎস হিংসা, হত্যা, পাল্টা-হত্যাকে উপজীব্য করে রচিত এই নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র রোমান সেনাপতি টাইটাসের পুত্ররা নিহত হলে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে টাইটাস বন্দী-গথদের রানী ট্যামোরার জ্যেষ্ঠপুত্রকে হত্যা করলেন। সেই হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে রানী ট্যামোরার ছেলেরা এবং রানী ট্যামোরার প্রণয়ী অ্যারন (Aron) টাইটাসের কন্যা ল্যাভিনিয়ার (Lavinia) উপর নৃশংস অত্যাচার চালাল। প্রতিহিংসাপরায়ণ টাইটাস রানী ট্যামোরার পুত্রদের হত্যা করে তাদেরই নরমাংস ট্যামোরাকে খেতে দিল, এমনকি অত্যাচারিতার লজ্জাস্কর জীবন থেকে মুক্তি দেবার জন্য নিজের একমাত্র কন্যা ল্যাভিনিয়াকেও হত্যা করল। রক্তস্নাত, প্রতিশোধ পিয়াসী টাইটাসের এই বিয়োগাত্মক নাটক সেনেকার নাটকের ভয়াবহতা ও শ্বাসরোধকারী আবেগ মন্থনের প্রতিচ্ছবি মাত্র।

রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট (Romeo and Juliet):

১৫৯৪ খ্রিঃ শেক্সপিয়ার তার দ্বিতীয় অসাধারণ ট্র্যাজেডি নাটক লিখলেন রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট (Romeo and Juliet)নিয়তি লাঞ্ছিত রোমান্টিক প্রেমের কাহিনী নিয়ে রচিত এই নাটকের নায়ক ভেরোনা শহরের অভিজাত মন্টেগু (Montagues) পরিবারের তরুণ রোমিও (Romeo) এবং নায়িকা ঐ শহরেরই অপর অভিজাত পরিবার ক্যাপুলেট (Capulets)দের সুন্দরী তরুণী জুলিয়েট (Juliet)মন্টেগু ও ক্যাপুলেট পরিবার দুটি একই শহরে বসবাস করলেও পরস্পরের চিরশত্রু। অথচ তাদের বংশের দুই সন্তানমন্টেগু পরিবারের রোমিও প্রথম দর্শনেই ক্যাপুলেটদের মেয়ে জুলিয়েটের প্রেমে পড়ে। গোপনে দুজনে বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ হয়। পরিবারের আর কেউই এই তথ্য জানত না। একদিন ক্যাপুলেট পরিবারের টাইবাল্ট (Tybalt) এর সাথে রোমিওর বন্ধু মার্কশিও (Marcutio) বিবাদ ও অসিযুদ্ধের মাঝে রোমিও এসে পড়ায় ঘটনাচক্রে রোমিওর অসির আঘাতে টাইবাল্টের মৃত্যু হয়। রোমিওকে ভেরোনা শহর থেকে নির্বাসন দণ্ড দেওয়া হল। ইতিমধ্যে ক্যাপুলেট পরিবারও রাজপরিবারের সাথে সম্পর্কিত জনৈক কাউন্ট প্যারিসের সাথে জুলিয়েটের বিয়ের ব্যবস্থা করেছে। রোমিওর প্রতি নিবেদিত প্রাণ জুলিয়েট অন্য কারো স্ত্রী হতে রাজী নয়। অথচ রোমিওর সাথে তার বিয়েও পরিবার থেকে মানতে রাজী নয়। তখন রোমিও-জুলিয়েটের শুভানুধ্যায়ী জনৈক যাজকের পরামর্শ মত ঠিক হল জুলিয়েট বিয়ের আগের রাতে বিষাক্ত পানীয় সেবন করবে এবং তার ফলে সে আপাতভাবে প্রাণহীন অবস্থায় দীর্ঘ সময় পড়ে থাকবে। সকলে তাকে মৃত ভেবে সমাধিস্থ করে আসার পর গভীর রাতে রোমিও এসে তাকে নিয়ে যাবে। সেই অনুসারে জুলিয়েট বিষাক্ত পানীয় পান করল এবং প্রত্যাশামতই সকলে তাকে মৃত ভেবে সমাধিস্থ করে এল। এদিকে যাজক নির্বাসিত রোমিওকে জুলিয়েটকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবার জন্য সংবাদ পাঠালেও রোমিওর কাছে সে সংবাদ ভুল ভাবেই পরিবেশিত হল যে জুলিয়েট মৃত। জুলিয়েটকে হারাবার বেদনায় উদভ্রান্ত রোমিও ফিরে এল প্রাণঘাতী বিষ সাথে নিয়ে। কাউন্ট প্যারিসের সাথে তার সাক্ষাৎ হওয়ায় রোমিও কাউন্টকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে হত্যা করে জুলিয়েটের দেহের পাশে এসে নিজেও আত্মহত্যা করল। অথচ সেই মুহূর্তেই জুলিয়েটের দেহেও প্রাণের স্পন্দন জেগে ওঠে। চেতনা ফিরে পেয়ে তার পাশেই রোমিওকে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে আত্মহারা জুলিয়েটও ছুরিকাঘাতে আত্মবিসর্জন দিল। যে প্রেমের ফলশ্রুতিতে এক অসাধারণ সুন্দর জীবন কাহিনী রচিত হতে পারত তার পরিসমাপ্তি ঘটল মর্মান্তিক পরিণতির মধ্যে। তাদের জীবদ্দশায় যা ঘটেনি, প্রেমিক যুগলের মৃত্যুতে তাই ঘটল, মন্টেগু ও ক্যাপুলেট পরিবার দুটির চিরশত্রুতার অবসান ঘটল। রোমিও জুলিয়েট নাটক দুটি তরুণ প্রাণের অকৃত্রিম আবেগময় প্রেমের নাটক- প্রেমের মহত্ব ও আত্মনিবেদনের গরিমার নাটক। ঘটনাচক্রে এ প্রেমের পরিণতি করুণ, বিয়োগাত্মক। তাই এই নাটকের ট্র্যাজিক গভীরতা নিয়ে বিদগ্ধজনেরা এবং সমালোচকরা নিঃশংস হতে পারেননি। অনেকের মতে শেক্সপিয়ার তার রোমিও জুলিয়েট নাটকের ভাবনাটিকে আহরণ করেছিলেন আর্থার ব্রুকের (Athur Brooke) বিখ্যাত কবিতা The Tragical History of Romeus and Juliet থেকে।

হ্যামলেট (Hamlet):

১৬০১ খ্রিঃ শেক্সপিয়ার লিখলেন তার তৃতীয় অসাধারণ ট্র্যাজেডি নাটক হ্যামলেট (Hamlet)তিনটি উৎস থেকে শেক্সপিয়ার এই কাহিনীর সূত্রানুসন্ধান করেছিলেন বলেই পণ্ডিতদের বিশ্বাস। প্রথম উৎস ঐতিহাসিক স্যাক্সো গ্রামাটিকাস (Saxo Grammaticus) এর Historia Danica গ্রন্থ। দ্বিতীয় উৎস Belleforest এর ফরাসী Histories Tragiques, এবং তৃতীয় উৎস সম্ভবত কিডের রচিত বিতর্কিত নাটক Ur Hamletএই লোককাহিনীর ঘটনা স্থল ডেনমার্ক শহর। ডেনমার্কের যুবরাজ তরুণ হ্যামলেট পিতা ডেনমার্কের রাজার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে দেশে ফিরে এসে দেখল তার কাকা ক্লডিয়াস (Claudias) তার মা রানী গারট্রুডকে (Gertrude) বিয়ে করে ইতিমধ্যেই ডেনমার্কের সিংহাসনে বসেছে। হ্যামলেটের মৃত পিতার প্রেতাত্মা তাকে তার মৃত্যুর রহস্য জানিয়ে বলে যে যারা তাকে হত্যা করেছে তারা হ্যামলেটের মা রানী গারট্রুড এবং কাকা ক্লডিয়াস। তাদেরই অবৈধ প্রেমের ফলশ্রুতিতে রাজাকে তারা হত্যা করেছিল। হ্যামলেট যেন তার প্রতিশোধ নেয়। মা ও কাকার অবৈধ প্রেম সম্পর্ক এবং তাদের যৌথ ষড়যন্ত্রে পিতার মৃত্যুর ঘটনায় হ্যামলেট বিহ্বল হয়ে পড়ল। প্রকৃত ঘটনা জানার তাগিদে এবং ক্লডিয়াসের সন্দেহের হাত থেকে আত্মরক্ষার্থে হ্যামেলট অপ্রকৃতিস্থতার ভান করতে শুরু করলেন। বিষণ্ণতা ও তিক্ততায় হ্যামলেটের সমস্ত অন্তর পরিপূর্ণ হয়ে গেল । এমন কি তার প্রেমিকা পলিনিয়াসের কন্য ওফেলিয়ার (Ophelia) প্রতিও তার আচরণ অনেকাংশে অমানবিক দুর্ব্যবহারে পরিণত হল। প্রেত বর্ণিত কাহিনীর সত্যতা যাচাই করতে রাজার উপস্থিতিতে হ্যামলেট বিশ্বাসঘাতকতা ও হত্যার এক অনুরূপ নাটক অভিনয়ের সময় ক্লডিয়াসের চক্রান্তের পরিচয় উদ্ঘাটিত হতে দেখে প্রেতের বক্তব্য সম্পর্কে নিঃসংশয় হল। পরে মা গারট্রুডের অপরাধ সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে তার ঘরে উপস্থিত থাকার সময় এক উত্তেজনাকর মুহূর্তে পর্দার আড়ালে আড়ি পেতে থাকা নিজের প্রেমিকা ওফেলিয়ার পিতা পলিনিয়াসকে রাজা ক্লডিয়াস মনে করে হত্যাও করে ফেলে। হ্যামলেট সব জেনে ফেলেছে বুঝে রাজা ক্লডিয়াস হ্যামলেটকে হত্যার পরিকল্পনা করে ইংলন্ডে পাঠাল। কিন্তু পথে জলদস্যুদের হাতে পড়ে ঘটনাচক্রে হ্যামলেট আবার ডেনমার্কে ফিরে এল। ইতিমধ্যে প্রেমিক হ্যামলেটের অপ্রকৃতিস্থতা ও তার হাতেই পিতা পলিনিয়াসের নিষ্ঠুর মৃত্যুতে শোকার্তা ওফেলিয়া আত্মঘাতী হয়েছে। পলিনিয়ামের পুত্র লেয়ারটেস পিতার মৃত্যুর জন্য হ্যামলেটের উপর প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হলে রাজা ক্লডিয়াস এক তরবারি যুদ্ধের আয়োজন করে। লেয়ারটেস রাজা ক্লডিয়াসের পরিকল্পনামত বিষমাখা তরবারির আঘাতে হ্যামলেটকে হত্যা করলেও তার আগেই হ্যামলেটের তরবারির আঘাতে তার মৃত্যু হয় এবং হ্যামলেটও ছুরিঘাতে রাজা ক্লডিয়াসকে হত্যা করে। তার আগেই হ্যামলেটের জন্য রাখা বিষ পানীয় ভুল করে পান করে তার মা রানী গারট্রুডের মৃত্যু হয়েছে। হ্যামলেটমহান নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের এক জটিল, বহু-বিতর্কিত ট্র্যাজেডি নাটক। সিংহাসনলিপ্সা, চক্রান্ত, হত্যা, প্রতিহিংসা, অপ্রকৃতিস্থতা, অবৈধ প্রেম, অশরীরী প্রেতের উপস্থিতি, নায়ক হ্যামলেটের তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্ব এই নাটকটিকে জটিল থেকে জটিলতর করে তুলেছে। যথার্থভাবেই এক ভয়ানক আত্মিক সংকটের আবর্তে নিমজ্জিত বিষণ্ণ ও বিপর্যস্ত হ্যামলেট-মানস প্রকৃতপক্ষেই এক সর্বকালীন সংকটের প্রতিরূপ। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে তার বিলম্ব ও দ্বিধা, গারট্রুডের আচরণে সমগ্র নারী জাতির প্রতি তার বিতৃষ্ণা যার ফলশ্রুতি ওফেলিয়াকে বর্জন; তার বিষণ্ণচিত্ততা ও অপ্রকৃতিস্থতা ইত্যাদি হ্যামলেট চরিত্রকে শেক্সপিয়ার তথা বিশ্বনাট্যের ইতিহাসে এক স্বতন্ত্র স্থান দিয়েছে। রেনেসাঁ জ্ঞানচর্চার উত্তুঙ্গ বিশ্বাসবোধ একসময় হ্যামলেটকে প্রাণিত করেছিল এই কথাগুলি বলতে – “What a piece of work is man !” প্রেম ও বিশ্বাসের বিনষ্টি সেই হ্যামলেটকে নারী-বিদ্বেষী করে তোলে। তার মুখে উচ্চারিত হয়— “Frailty, thy name is woman.” সবশেষে হ্যামলেটের রূঢ় জীবন বাস্তবের ঘোর কৃষ্ণপক্ষে উপনীত হয়। “... yet what is this quintessence of dust.” “ক্লডিয়াস ও গারট্রুডের মৃত্যুতে পৃথিবী পাপমুক্ত হবে এমন কোন আশা থাকে না হ্যামলেটের।” (ইংরেজী সাহিত্যের ইতিহাসকুন্তল চট্টোপাধ্যায়)। কবি ইলিয়টের কাছে তাই শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট নাট্যসাহিত্যের অসাধারণ চিত্ররূপ মোনালিসা (Monalisa of Literature)বিশ্ব নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসেও হ্যামলেটের ট্র্যাজেডির কোন তুলনা নেই।

ওথেলো (Othello):

পরবর্তী ট্র্যাজেডি ওথেলো (Othello) — রচনাকাল ১৬০৪ খ্রিঃ। ইতালীয় লেখক সিনথিওর হেকাটোমিথি অবলম্বনে রচিত শেক্সপিয়ারের এই ট্র্যাজেডি প্রেম, ঈর্ষা ও ভাগ্যবিড়ম্বনার এক অবিস্মরণীয় কাহিনী। ভেনিসের সেনেটর ব্রাবানশিওর (Brabantio) তরুণী সুন্দরী কন্যা ডেসডিমোনাকে পত্নীরূপে পেয়েছে কৃষ্ণকায় বীর সেনানায়ক মুর জাতির ওথেলো। ওথেলো তরুণ ক্যাসিওকে (Cassio) তার অধীনে লেফটেন্যান্ট পদে নিয়োগ করলে পদের আর একজন দাবীদার ইয়াগো ওথেলোর উপর রুষ্ট হয়ে প্রতিশোধ নিতে তৎপর হয়। প্রথমে চক্রান্তের জালবুনে ক্যাসিওকে পদচ্যুত করে ইয়াগো তারপর ক্যাসিওর মাধ্যমে ডেসডিমোনাকে অনুরোধ করে ক্যাসিওর হয়ে ওথেলোর কাছে দরবার করতে। ইতিমধ্যে সে আরো নিপুণভাবে ওথেলোর মনে ডেসডিমোনার আনুগত্য সম্পর্কে সন্দেহও জাগিয়ে তোলে। তারপর একদিন ইয়াগোরই কুশলী আয়োজনে ডেসডিমোনাকে দেওয়া প্রেমের প্রতীকচিহ্ন ওথেলোরই একটি রুমাল পাওয়া গেল ক্যাসিওর কাছে। সরল নির্দোষ ডেসডিমোনা এসবের কিছুই জানত না। দারুণ ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে ওথেলো নির্দয়ভাবে ডেসডিমোনার শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করল। অন্যদিকে নির্দোষ ক্যাসিওকে হত্যা করার জন্য ইয়াগো তার অনুচর রডরিগোকে নিযুক্ত করেছিল। কিন্তু রডরিগো ব্যর্থ হওয়ায় ইয়াগোর সমস্ত চক্রান্তই প্রকাশিত হয়ে পড়ল। তীব্র অনুশোচনায় ওথেলো আত্মহত্যার পথ বেছে নিল। সামানা বিবেচনা ও বিচক্ষণতার অভাব যে কিভাবে মহৎ চরিত্রের মহিমাময়তাকে খর্ব করে ও তাকে দুর্ভাগ্যের শিকারে পরিণত করে ওথেলোর চরিত্র তারই উদাহরণ।ওথেলো ব্যক্তিগতভাবে উদার চরিত্রের মহৎপ্রাণ। নীচ, কুটিল চক্রান্তকারী ইয়াগোর উদ্দেশ্য অনুধাবন করা বা তার পরিকল্পনার রহস্যজাল ভেদ করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। ইংরাজ কবি কোলরিজ ইয়াগোর খলচরিত্রের মধ্যে ‘motiveless malignity’ বা উদ্দেশ্যহীন ইতরতার চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন। আধুনিক সমালোচকদের চোখে ইয়াগো স্বার্থপর, উচ্চাকাঙ্ক্ষী সিনিকচরিত্র। ওথেলো মূলত রোমান্টিক প্রেমিক। ইয়াগোর প্ররোচনায় সে তার আত্মসচেতনতা, বিবেক ও বিচারবোধ হারিয়ে ফেলে ডেসডিমোনাকে হত্যা ও নিজের আত্মহননের মাধ্যমে প্রায়শ্চিত্ত করলেও তার পতনে আমরা এক শক্তিমান ও মহৎ মানুষের করুণ অপচয় ও বিনাশের বোধে আক্রান্ত হই।উল্লেখযোগ্য যে হ্যামলেট নাটকের গভীরতা, কিং লিয়ার নাটকের বিশালতা ও শক্তি এবং ম্যাকবেথের ভয়ার্ত, তমসাচ্ছন্ন আবহ-এগুলির কোনটিই ওথেলো নাটকে না থাকলেও এর প্লটের গঠন অনেক বেশি পরিমিত ও সুষমামণ্ডিত। এ নাটকের গতিই এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

কিং লীয়ার ( King Lear):

পর বৎসর ১৬০৫ খ্রিঃ শেক্সপিয়ার লিখলেন তার অপর অসাধারণ ট্র্যাজেডি কিং লীয়ার ( King Lear) হলিনশেডের বৃত্তান্তে ও স্পেনসারের Faerie Queene কাব্যে উল্লিখিত দ্বাদশ শতকের Geoffrey of Monmouth বর্ণিত কাহিনী ও একই বিষয়ে লেখক পরিচিতিহীন একটি নাটককে উপজীব্য করে শেক্সপিয়ার পুরাণ ও লোক কথায় প্রচলিত ভাগ্য বিড়ম্বিত অশীতিপর রাজা লীয়ার ও তার তিন কন্যার কাহিনীকে এই ট্র্যাজেডি নাটকে উপস্থাপিত করেছেন। রাজা লীয়ারের কাহিনী তারই অশাসিত আবেগ ও অপরিণামদর্শিতার পরিণতি। অশীতিপর বৃদ্ধ রাজা লীয়ার তার তিন কন্যাআলবেনীর ডিউক পত্নী গনেরিল (Goineril), কর্ণওয়ালের ডিউকপত্নী রেগন (Regan) ও সর্বকনিষ্ঠা কর্ডেলিয়ার (Cordelia) মধ্যে তার রাজত্ব ভাগ করে দেবার প্রস্তাব দেন। ঠিক হল এই বণ্টনের আগে তিন কন্যার প্রত্যেকে তাদের পিতার প্রতি তাদের ভালোবাসা ব্যক্ত করবে। সাড়ম্বর বাকচাতুর্যে রাজা লীয়ারকে বিমোহিত করে গনেরিল এবং রেগন দুজনেই রাজ্যের এক-তৃতীয়াংশ লাভ করল। কনিষ্ঠা কন্যা কর্ডেলিয়া এ জাতীয় অতিশয়োক্তি ও চাটুকারিতাকে ঘৃণাভরে উপেক্ষা করে সহজ সরল ভাবে পিতার প্রতি তার ভালোবাসাকে ব্যক্ত করল। কর্ডেলিয়ার এই সহজ, সরল কর্তব্যপরায়ণ ভালোবাসার অভিব্যক্তিতে ক্রুদ্ধ রাজা লীয়ার অন্ধ ক্রোধে কর্ডেলিয়াকে নির্বাসন দণ্ড দিলেন। নির্বাসিতা কর্ডেলিয়াকে ফ্রান্সের রাজা বিনাপণেই বিবাহ করল। রাজা লীয়ারের পরবর্তী পরিণতি অত্যন্ত করুণ। হৃদয়হীনা কন্যাদ্বয় গনেরিল ও রেগনের হাতে রাজা লীয়ার দারুণ ভাবে উৎপীড়িত ও লাঞ্ছিত হবার পর গৃহ থেকে বিতাড়িত হলেন। বিতাড়িত রাজা তার বিদূষককে সঙ্গে নিয়ে অভুক্ত অবস্থায় ছিন্নবস্ত্র পরিধান করে ক্রোধে অভিমানে উন্মত্ত অবস্থায় ঝড়ঝঞ্ঝায় উত্তাল উন্মুক্ত আকাশের নীচে অসহায় ভাবে এসে দাঁড়ালেন। লীয়ারের কাহিনীর পাশাপাশি নাটকে আরো একটি কাহিনী আছে। সেই কাহিনীর নায়ক আর্ল অব গ্লস্টার তার অবৈধ পুত্র এডমন্ডের চক্রান্তে দারুণভাবে নিগৃহীত হবার পর নিষ্ঠুর কর্ণওয়ালের অত্যাচারে অন্ধ হয়ে গেছেন। ভাগ্যহত গ্লস্টার আত্মহননের পথ বেছে নেওয়ায় সেই সময়ে তার নিজেরই পরিত্যক্ত অপর সন্তান এডগার উন্মাদের ছদ্মরূপ ধরে তাকে বাঁচিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে এসে আশ্রয় দিল। রাজা লীয়ারও তেমনি উন্মাদ হয়েও আশ্রয় পেল স্নেহশীলা কন্যা কর্ডেলিয়ার কাছে। অন্যদিকে এডমন্ডের প্রতি প্রণয়াসক্ত দুই ভগিনী গনেরিল ও রেগন নিয়তির নিষ্ঠুর বিধানে পারস্পরিক দ্বন্দ্বে রত হল। গনেরিল রেগনকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে নিজেও আত্মঘাতিনী হল। এর মধ্যে ইংলন্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধলে এডমন্ড ও আলবেনী পরিচালিত ইংরেজ বাহিনীর হাতে ফরাসীরা পরাজিত হল। লীয়ার ও কর্ডেলিয়াকে কারারুদ্ধ করা হল পরে কর্ডেলিয়াকে ফাঁসি দেওয়া হল। প্রিয়তমা কন্যার প্রাণহীন দেহ নিয়ে হাহাকারে ফেটে পড়লেন লীয়ার। অসহনীয় মনোবেদনায় অশীতিপর রাজা লীয়ার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। ঐশ্বর্য ও রাজগরিমার দম্ভ কিভাবে লীয়ারের দৃষ্টি ও বিবেচনাবোধকে আছন্ন করেছিল এবং কিভাবে সহ শারীরিক ও মানসিক পীড়নের মধ্য দিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে তিনি ফিরে পেলেন তার চেতনা তা নিয়েই এক অবিস্মরণীয় ট্র্যাজেডি কিং লীয়ার। এই নাটকের গঠনে লীয়ার কাহিনী ও গ্লস্টার কাহিনীর নিপুণ গ্রন্থনে বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন শেক্সপিয়ার। হিংসা, অবৈধ প্রণয়, মনোবিকার, ক্ষমতালিপ্সা প্রভৃতি পরিচিত শেক্সপিরীয় প্রসঙ্গও এসেছে এই নাটকে। বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঝড়ের দৃশ্যগুলি (Storm Scenes) এবং গ্লস্টারের চক্ষু উৎপাটিত করার রক্ত মন্থনকারী দৃশ্যটি।” (ইংরাজী সাহিত্যের ইতিহাসকুন্তল চট্টোপাধ্যায়)

ম্যাকবেথ (Macbeth):

ম্যাকবেথট্র্যাজেডির রচনাকাল ১৬০৬ খ্রিঃ। এই ট্র্যাজেডির কাহিনী এক অমিতবীর্য সর্বজনবন্দিত সেনানায়কের নিজেরই দুরন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অতিপ্রাকৃত শক্তির ভবিষ্যৎবাণীতে বিশ্বাস এবং নিজ পত্নীর প্ররোচনায় পদস্খলিত হয়ে ঘাতকে পরিণত হওয়ার ও অবশেষে চক্রান্তকারী, রক্তলোলুপ শাসক হিসাবে মৃত্যুমুখে পতিত হবার কাহিনী। কাহিনীর ঘটনাস্থল স্কটল্যান্ড। স্কটল্যান্ডের রাজা ডানকানের দুই বীর সেনাপতি ম্যাকবেথ (Macbeth) এবং ব্যাঙ্কো (Banquo) যুদ্ধ জয় শেষে দেশে ফেরার পথে তিন ডাকিনীর সাক্ষাৎ পেল। তারা ম্যাকবেথের রাজা হবার এবং ব্যাঙ্কোর পুত্রদের রাজা হবার ভবিষ্যদ্বাণী করে অন্তর্হিত হল। কল্পনাপ্রবণ উচ্চাকাঙ্ক্ষী বীর সেনাপতি ম্যাকবেথের পত্নী লেডি ম্যাকবেথ একান্ত বাস্তববাদী নারী। ইতিমধ্যে সৎ ও আদর্শ রাজা ডানকান তাদেরই দুর্গে এসে আতিথ্য গ্রহণ করেছেন। ম্যাকবেথের মনের যাবতীয় দ্বন্দ্ব, ভয়, কল্পনার অবসান করিয়ে লেডি ম্যাকবেথ অকম্পিত চিত্তে তাকে প্ররোচিত করল বৃদ্ধ নিদ্রিত রাজা ডানকানকে হত্যা করতে। ম্যাকবেথ সিংহাসনে বসল। রাজমুকুট নিষ্কণ্টক করতে বিনিদ্র অসহিষ্ণু ম্যাকবেথ ব্যাঙ্কো ও তার পুত্রদের হত্যা করতে ঘাতক নিয়োগ করল। ব্যাঙ্কো নিহত হলেও তার পুত্র ফিয়ান্স পালাতে সক্ষম হল। বিখ্যাত ভোজসভার দৃশ্যে (Banquet scene) ব্যাঙ্কোর রক্তাপ্লুত প্রেতমূর্তি দেখে ম্যাকবেথ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আবার ডাকিনীদের শরণাপন্ন হল। ডাকিনীরা ভবিষ্যদ্বাণী করল যে যেদিন বিরনাম বন ডানসিন পাহাড়ের দিকে এগিয়ে আসবে সেদিন মাতৃগর্ভ থেকে স্বাভাবিকভাবে যার জন্ম হয়নি এমন কোন মানুষের হাতে ম্যাকবেথ নিহত হবে। ইতিমধ্যেই ডাকিনীদের প্ররোচনায় ম্যাকবেথ নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করিয়েছে ম্যাকডাফের পরিবার পরিজনদের। অসহনীয় মনোযন্ত্রণায় লেডি ম্যাকবেথ পাগল হয়ে গেছে, মনোবিকারের শিকার হয়ে করুণভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। অসহ্য অনুশোচনা ও আত্মপীড়নের শিকার হয়ে ম্যাকবেথ টিকে আছে তার অনিবার্য ধ্বংসের মুখোমুখি হাতে। অবশেষে শেষের সে দিন এগিয়ে এল। ম্যাকডাফ ও ডানকান পুত্র ম্যালকমের সম্মিলিত বাহিনীর সৈনারা বিরনাম বনের এক একটি বৃক্ষ শাখায় নিজেদের আবৃত্ত করে ডানসিন পাহাড়ে ম্যাকবোধের দুর্গের দিকে এগিয়ে এল। যুদ্ধে অযোনিসম্ভূত ম্যাকডাফের হাতে ম্যাকবেথ নিহত হল। নীতিহীন, বিবেকহীন ম্যাকবেথ ধ্বংস হল প্রতিশোধের দেবী Nemesis এর বিধানে। অধ্যাপক কুণ্ডল চট্টোপাধ্যায়কে অনুসরণ করে বলা যায় অন্যায় উচ্চাশার বশবর্তী হয়ে আকাশচুম্বী ব্যক্তিত্বের অধিকারী ম্যাকবেথের করুণ পরিণতি এ নাটককে নিঃসন্দেহে এক প্রগাঢ় বিশ্ববীক্ষার স্তরে উত্তীর্ণ করেছে।এখানেই এই ট্র্যাজেডির সার্থকতা।

অ্যান্টনি ও ক্লিওপেট্রার (Antony and Cleopatra):

অপর অসাধারণ ট্র্যাজেডি অ্যান্টনি ও ক্লিওপেট্রার (Antony and Cleopatra)-র রচনাকাল ১৬০৬-৭ খ্রিঃ। প্লুটার্কের Life of Antonius গ্রন্থটির যে অনুবাদ নর্থ করেছিলেন তাকেই উৎস করে শেক্সপিয়ার এই নাটক রচনা করেছিলেন। এই ট্র্যাজেডির কাহিনী ঐতিহাসিক। ইজিপ্টের রানী ক্লিওপেট্রার অসাধারণ সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে জগদ্বিখ্যাত রোমাক সেনাপতি বীর মার্ক অ্যান্টনির যে মর্মান্তিক পরিণতির কথা ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে তাকে আশ্রয় করেই এই নাটক রচিত হয়েছে। ক্লিওপেট্রার প্রতি আসক্তি অনুরাগে অ্যান্টনি রাষ্ট্রশাসনে বিমুখ হয়ে পড়ল। পত্নী ফুলভিয়ার মৃত্যু ও রোমের কিছু রাজনৈতিক সমস্যা ও জটিলতার কারণে মার্ক সাময়িকভাবে ক্লিওপেট্রার সঙ্গসুখ ছেড়ে রোমে ফিরে এল। রোমের তদানীন্তন শাসক অক্টেভিয়াস সিজারের বোন অক্টেভিয়াকে বিবাহ করে অ্যান্টনি ঘরোয়া বিবাদ খানিকটা প্রশমিত করে আবার ক্লিওপেট্রার কাছে ফিরে গেল। ক্ষুব্ধ অক্টেভিয়াস মিশর আক্রমণ করলে অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধে মিশরীয় নৌবহর পলায়ন করায় অ্যান্টনি পরাজিত হল। ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর ভুল সংবাদ শুনে বেদনাবিধুর অ্যান্টনি নিজের তরবারি বুকে গেঁথে আত্মহত্যা করল। ক্লিওপেট্রাও আত্মহনন করে মৃত প্রেমিককে অনুসরণ করে। এ নাটকের নায়ক-নায়িকা অ্যান্টনি ও ক্লিওপেট্রা দুজনেই সমান গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষক চরিত্র। অসাধারণ রূপসী জাদুকরী রানী ক্লিওপেট্রার মোহময়ীরূপের অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণে রোমের সর্বশক্তিমান ত্রিশক্তির (triumvirate) অন্যতম বীর অ্যান্টনির করুণ পরিণতিই এই নাটকের প্রেমকাহিনীর বিষয়বস্তু। প্রেম ও বাসনার তাড়না এবং রোম ও জনগণের প্রতি তার কর্তব্যএই দুই মেরুর মাঝে পড়ে মার্ক অ্যান্টনির অসহনীয় মর্মযাতনা এবং মৃত্যু আর পরিশেষে ক্লিওপেট্রার সাড়ম্বর আত্মহননএই নাটককে ঐতিহাসিক আখ্যানধর্মী নাটক থেকে সরিয়ে এক ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। নাটকটির বিস্তৃত আঙ্গিকে গঠন বিন্যাসে খানিক শৈথিল্য থাকলেও এই নাটকের আর এক উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হল মার্ক অ্যান্টনির বন্ধ এনোবারবাসের আকর্ষণীয় Choric চরিত্র।