-->

মাইকেল মধুসূদনের 'মেঘনাদবধ' কাব্যে বর্ণিত রাবণের রাজসভার বর্ণনা

মাইকেল মধুসূদনের 'মেঘনাদবধ' কাব্যে বর্ণিত রাবণের রাজসভার বর্ণনা

রাবণের রাজসভার বর্ণনা

অভিজ্ঞতার বাইরে পা-ফেলা কবির পক্ষে বিপজ্জনক। তবু এ বিপজ্জনক পথে কখনো কখনো অগ্রসর হতে হয় তাঁকে—বিশেষত যখন তিনি তন্ময়ী আখ্যানে গড়তে প্রয়াসী হন কাব্যের ইমারৎ। এক্ষেত্রে এই চরম সংকটে কল্পনাই তাঁর শেষ ভরসা। কিন্তু কল্পনাও যথাযথ খেলে ওঠেনা যদি তার নিদেন আশ্রয়ও না-থাকে। বাস্তব অথবা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা না-ই যদি থাকে, পাঠ-অভিজ্ঞতাও এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে কবিকে। আড়াই হাজাদ্রাবিড়র বছর আগেকার বৈভবপূর্ণ দ্রাবিড় রাজসভা দেখার অভিজ্ঞতা একালের কবির থাকতে পারে না। সততই ‘মেঘনাদবধ’ কাব্যে রাবণের রাজসভা বর্ণনায় মধুসূদনকে নির্ভর করতে হয়েছে তাঁর কল্পনার উপর। কিন্তু এ কল্পনা কি একেবারে নিরাধার? কোনো উৎসই নেই তার? অধ্যাপক সুরেশচন্দ্র মৈত্র (মাইকেল মধুসূদন দত্ত: জীবন ও কাব্য) সিদ্ধান্ত করেছেন, এর উৎস কাঞ্চীপুরম-মহাবলীপুরমের বিশালাকার মন্দির সমূহ, যেগুলো দেখে বিস্মিত ফার্গুসন বলেছিলেন ‘দানবীয়’। কিন্তু অধ্যাপক মৈত্রের এ সিদ্ধান্ত ভিত্তিহীন, কারণ, প্রথমত: মাদ্রাজে ছিলেন বা সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলেই যে মধুসূদন ঐ সব মন্দির দেখেছিলেন সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না, বিশেষত যেহেতু তিনি তখন অর্থের টানাটানিতে ছিলেন; আর ‘মেঘনাদবধ’ লেখার সময় কোনো চিঠিপত্রে এমন ইঙ্গিতও তিনি কোথাও দেননি; দ্বিতীয়ত: মন্দির দেখে রাজসভার স্থাপত্য কল্পনা করা যায় না, উভয়ের স্থাপত্য একেবারেই আলাদা; দক্ষিণেশ্বরের মন্দির দেখে কেউ রানী রাসমণির বাসগৃহের স্থাপত্য কল্পনা করতে পারবেন না।—তাহলে?

আমাদের ধারণা, ‘মেঘনাদবধ’ লেখার আগে হোমার-ভার্জিল-ট্যাসো-মিল্টনাদি পাশ্চাত্য মহাকবিদের কাব্যে নানা রাজসভা বা মন্ত্রণাগৃহের বর্ণনা পড়লেও পাশ্চাত্ত্যের স্থাপত্যের আদলে আড়াই হাজার বছর আগেকার দ্রাবিড় রাজসভার পরিকল্পনায় মধুসূদন উৎসাহিত হননি; এক্ষেত্রে তিনি আশ্রয় করেছেন প্রাচ্য ঐতিহ্যবোধ তথা সংস্কৃত সাহিত্যের রাজসভা বর্ণনা। সংস্কৃত সাহিত্যের বিপুল পরিধিতেও এ জন্য অন্বীক্ষ হয়ে ঘুরতে হয়নি তাকে। ইন্দ্রজিতের দ্বারা আবদ্ধ হয়ে হনুমান যখন নীত হয়েছিলেন রাবণের রাজসভায়, বাল্মীকি রামায়ণে তখন হনুমানের দৃষ্টিতে সিংহাসনারূঢ় রাবণ ও তার রাজসভার নাতিদীর্ঘ বর্ণনা করা হয়েছে। তবে হনুমান প্রধান ভাবে রাবণকেই বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছিলেন বলে রাজসভার বর্ণনা সেখানে তেমন গুরুত্ব পায়নি। কৃত্তিবাসের রাবণ-রাজসভা বর্ণনাতেও অভিনিবেশ নেই একই কারণে। আমাদের ধারণা এক্ষেত্রে মধুসূদন অনুপ্রাণিত হয়েছেন মহাভারতে ইন্দ্রপ্রস্থে ময় নির্মিত যুধিষ্ঠিরের রাজসভার বর্ণনায়। সেটা বিশেষ করে এইজন্য মনে হয় যে ঐ রাজসভার সঙ্গেই তিনি তুলনা করেছেন রাবণের রাজসভাকে

“কি ছাড় ইহার কাছে, হে দানবপতি

ময়, মণিময় সভা, ইন্দ্রপ্রস্থে যাহা

স্বহস্তে গড়িলা তুমি তুষিতে পৌরবে?

রামায়ণ জানাচ্ছে, রাবণের রাজসভা বিশ্বকর্মার তৈরী। মধুসূদন ব্যতিরেকের ব্যবহার করলেও লক্ষণীয় যুধিষ্ঠিরের রাজসভার মতোই তিনি রাবণের রাজসভা স্ফটিকে নির্মিত এবং নানা রত্নখচিত বলে উল্লেখ করেছেন। অধিক পরিমাণে যে বস্তুর ব্যবহার তিনি কল্পনা করেছেন এ রাজসভায়, তা হল সোনা। সোনার ছাদ, সোনার সিংহ, স্বর্ণপত্র, স্বর্ণাভরণ ইত্যাদি স্মরণ করিয়ে দেয় যে সভার কথা কবি বলছেন তা স্বর্ণালঙ্কার। স্বর্ণলঙ্কাকে তিনি যেমন কল্পনা করেছেন ‘জগৎ-বাসনা’ বলে, তেমনি তার রাজসভাকে কল্পনা করেছেন ‘ভূতলে অতুল’ বলে। লক্ষ্য করা যেতে পারে ‘ভূতলে অকুল’ এ রাজসভার উপস্থাপন কিভাবে করছেন তিনি—


সোনার সিংহাসনে বসে আছেন লঙ্কেশ্বর দশানন, যেন হিমালয়ের হেমকূট শৃঙ্গের উপর বিভা-বিথারী স্বর্ণচ্ছটা তিনি। তার চারিদিকে নতভাবে বসে আছেন শত শত পাত্রমিত্র-সভাসদবর্গ। পৃথিবীতে এ রাজসভা তুলনাহীন, স্ফটিকে নির্মিত এর হর্ম্য এবং স্ফটিক সমূহও সুশোভিত হয়েছে অপর্যাপ্ত মূল্যবান রত্নরাজিতে। অসংখ্য পদ্ম যেমন টলটল করে মানস সরোবরের জলে, তেমনি ঐ রত্নরাজি হর্মের স্ফটিক গাত্রে ভাসমান। সাদা, লাল, নীল ও হলুদ রঙের সারি সারি অনেক স্তম্ভ রয়েছে এই রাজসভায়। বাসুকি নাগ যেমন তার অযুত ফণা বিস্তার করে পৃথিবীকে ধারণ করে থাকে, তেমনি নানাবর্ণ স্তম্ভগুলি ধরণ্য করেছে এ বিশাল রাজসভার স্বর্ণচ্ছাদ। ব্রত উদযাপনের সময় গৃহে যেমন পাতার মাল টাঙানো হয় এবং তাকে যেমন সাজিয়ে তোলা হয় নানান রকমের ফুলে ও মুকুলে, তেমনি রাবণের এ রাজসভায় অসংখ্য ঝালর টাঙানো এবং ঝালরগুলিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে হীরা, মুক্তা, পদ্মরাগ, মরকত ইত্যাদি মূল্যবান রত্নরাজিতে। এইসব রত্ন থেকে বিদ্যুতের মতো আলো ঠিকরে এসে চোখ ধাঁদিয়ে দিচ্ছে।

চাঁদের মতো মুখ আর অতি সুন্দর চক্ষু বিশিষ্টা পরিচারিকারা তাদের মৃণালবাহু আন্দোলিত করে চামর দুলাচ্ছে এ সভায়, ছত্রধর ধরে আছে রাজছত্র। ছত্রধরকে দেখে মনে হচ্ছে প্রেমের দেবতা স্বয়ং কন্দর্প শিবের ক্রোধাগ্নিতে না পুড়ে পালিয়ে এসে এখানে যেন ছত্রধরের কাজ নিয়েছেন। রাজসভার প্রবেশদ্বারে রয়েছে ভীষণ দৌবারিক, তারা কেন পাণ্ডব-শিবিরে প্রহরারত স্বয়ং বিরূপাক্ষ।

মৃদুমন্দ বসন্ত বাতাস নিরন্তর বয়ে চলেছে রাজসভায়, বাতাসে মিশে আছে অপূর্ব সুগন্ধ আর পাখিদের বৈতালিক। অনুচ্চ সে বিহঙ্গগীতি যেন ব্রজবিপিনে শ্রীকৃষ্ণের নিনাদতরলা বাঁশির সুর। কবি বলেন, পাণ্ডবদের মনোতুষ্টির জন্য ময় দানব ইন্দ্ৰপ্ৰস্থে যে আশ্চর্য সভা নির্মাণ করেছিলেন, তা লঙ্কেশ্বের এ সভার তুল্যই নয়।

‘মেঘনাদবধ’ কাব্যের প্রথম সর্গে রাজসভার কবিকৃত প্রত্যক্ষ বর্ণনা এইটুকুই। এ কাব্যের সপ্তম এবং নবম সর্গে আবার দেখানো হয়েছে রাজসভা, কিন্তু পুনরুক্তি-দোষের আশঙ্কায় তার কোনো বর্ণনা দেওয়া হয়নি। প্রথম সর্গে রাজসভার বর্ণনায় কবি প্রত্যক্ষভাবে ব্যয় করেছেন তেত্রিশটি পঙক্তি। সারা কাব্যের ছয় হাজার একানব্বই অর্থাৎ প্রায় সাত হাজার পঙক্তির তুলনায় এ ব্যয় অকিঞ্চিৎকর। সুতরাং যারা বলেন রাজসভার বর্ণনায় কবি ক্লান্তিহীন, তারা ঠিক বলেন না। বস্তুত প্রয়োজন বোধের অতিরিক্ত একটি পঙক্তিও মধুসূদন লিখতে চাননি; অনেক প্রসঙ্গের তুলনায় এ প্রসঙ্গে তিনি যেন একটু বেশিই সংযত-বাক্‌।

রাজসভার বর্ণনা প্রসঙ্গে লক্ষণীয় এ সভার ঐশ্বর্যের ও জাঁকজমকের দিকে কবি যতখানি দৃষ্টি দিয়েছেন সমানুপাতে দৃষ্টি দেননি তার স্থাপত্যের প্রতি। সভাগৃহের দেওয়াল, দরজা, গবাক্ষ, খিলান-গম্বুজের কারুকার্য সম্পর্কে কোনো বর্ণনা নেই। সারি সারি স্তম্ভের উল্লেখে রাজসভার দৈর্ঘ্য সম্পর্কে যদি বা একটা কল্পনা জাগে, এর প্রস্থ সম্পর্কে ব্যঞ্জনা জাগানো কেনে অনুষঙ্গ নেই। আর, স্তম্ভগুলিকে বাসুকির অযুত ফণার সঙ্গে তুলনা করায় স্তম্ভের ‘সারি সারি’ ছবিটি ব্যাহত হয়েছে, অন্যদিকে স্তম্ভের উচ্চতা সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ছবি পাওয়া যায়নি পৌরাণিক উপমানটি অস্পষ্ট বলে। তবে এ রাজপ্রাসাদ যে অভ্রভেদী তা মূর্ত হয়ে ওঠে যুদ্ধক্ষেত্রে বীরবাহুকে দেখার জন্য সপার্ষৎ রাবণের প্রাসাদ-শীর্ষে আরোহণের বর্ণনায়—

“উঠিলা রাক্ষসপতি প্রাসাদ-শিখরে,

কনক-উদয় চলে, দিনমণি যেন

অংশুমালী।’’

প্রাসাদ এখানে উপমিত হয়েছে উদয়াচলের সঙ্গে। উদয়াচল কাল্পনিক হলেও পাহাড়ের ছবি এবং তার ফলেই রাবণের প্রাসাদের অতীব উচ্চতার একটি ছবি তৈরী হয়ে যায় পাঠকের মনে।রাজসভার অন্তর্গত সারি সারি স্তম্ভের লাল সাদা নীল হলুদ ইত্যাদি তীব্র চড়া ও অসমঞ্জস রঙের সমায়োজনে রাজসভার ছবি খুলেছে কিনা তা নিয়ে ধন্দ কাটা সহজ নয়। তেমনি ঝালরের সঙ্গে ব্রতালয়ের পাতার মালার আর তার মুকুল ও ফুলের সঙ্গে রাজসভার রত্নদ্যুতির তুলনাও যথোপযুক্ত নয়, কারণ রত্নের দীপ্তি এতে ম্লান হয়ে গেছে। ব্রতালয়ের সঙ্গে রাজসভার তুলনাও প্রশংসনীয় নয়। উভয়ের বৈভবে বিস্তর পার্থক্য। ষোলো বছরের রবীন্দ্রনাথকে রাজসভার এ বর্ণনা আকৃষ্ট করতে পারেনি, তিনি নাট্যশালার সঙ্গে তুলনা করে স্পষ্টতই একে বিদ্রূপ করেছিলেন। কিন্তু ঠিক এতখানি বিদ্রূপ হয়তো পাওনা ছিল না মধুসূদনের। সুন্দর নেত্র বিশিষ্ট রমণীদের সুডৌল বাহু আন্দোলন করে চামর ঢুলানো কিম্বা ছত্রধরের কন্দর্পকান্তি কিম্বা অসংখ্য রত্নের শাণিত দীপ্তি আর ধীর মলয়ে পাখির মৃদু কলতান ইত্যাদি পাঠকের মনে এক মহিমময় রাজসভার ভাবচ্ছবিই জাগিয়ে দেয়। সুনির্বাচিত কয়েকটি অনুষঙ্গের দ্যোতনায় বৃহৎকে ফ্রেমে ধরার এ চেষ্টায় মাইকেল যদি একেবারে ব্যর্থই হতেন তবে যুগযুগ ধরে গৌড়জন নিরবধি এর সৌন্দর্য সুধা পান করতে পারত না। বস্তুত ব্যর্থ নয়, অকারণ দ্রুতি-জনিত অস্থিরতায় কিছুটা জটি বর্তালেও (যেমন, স্ফটিকে নির্মিত রাজসভায় রত্নরাজির সমাহারকে দুর্বল উপমা দিয়ে তিনি লিখেছেন ‘মানস-সরসে / সরস কমলফুল বিকশিত যথা’, যা পাঠকের মনে কোনো চিত্রাদ্ভাসই ঘটায় না), রাবণের রাজসভার ঐশ্বর্য এবং বৈভবকে অভিব্যঞ্জিত করতে তার উদ্যম অনেকটাই সফল, তুচ্ছাতিতুচ্ছেরও পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনায় পাতার পর পাতা না ভরিয়ে রাবণের সুউচ্চ স্বর্ণসিংহাসন, স্ফটিকে নির্মিত সভায় অসংখ্য মণিরত্নের চোখ ধাঁধানো দীপ্তি, সারি সারি গুপ্ত, তাদের মাথার উপর সোনার ছাদ, সুন্দর ছত্রধর, চারুনেত্রা চামর-বাহিনী ইত্যাদি কিছু সুনির্বাচিত বিষয় বা উপাদানের বর্ণনার মধ্য দিয়েই রাজসভার ‘ভূতলে অতুল’ রূপটিকে তিনি জাগিয়ে দিতে চেয়েছিলেন পাঠকের মানস-নয়নে এবং সেটা তিনি পেরেছেন। বর্ণনাকৌশলে রূপদক্ষ কবি যেন হয়ে উঠেছেন ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পী।

এখন প্রশ্ন হল, রাবণের এ রাজসভার বর্ণনা কি অত্যাবশ্যক ছিল ‘মেঘনাদবধ’ কাব্যে? এবং একেবারে কাব্যের শুরুতেই?

রাজার মহিমা তার ঐশ্বর্য, বৈভব, বিচক্ষণতা এবং বিক্রমে। প্রথম দুটি বাহ্যিক, শেষ দুটি আত্মিক ও ক্রিয়া-নির্ভর। শেষ দুটির পরম প্রকাশ ট্র্যাজিক বিপন্নতাকে পাঠকের সংবেদনায় ফলিয়ে তুলতে প্রথম দুটির সহায়তা আবশ্যিক। যে রাবণ কাব্যের ট্র্যাজিক বেদনার প্রধান আশ্রয়, তার সর্বনাশ যে কী বিশাল মানুষের সর্বনাশ, তা প্ৰতীয়ত করে তোলার জন্যই প্রয়োজন ছিল লঙ্কার রাজসভার বৈভব সম্পর্কে পাঠককে অবহিত করা। সুতরাং এ রাজসভা বর্ণনার দরকার ছিল। দরকার ছিল আরো একটি কাব্যাৎকর্ষ সৃষ্টির প্রয়োজনেও। ‘ভূতলে অতুল’ রাজসভায় বসে রাজা কাঁদছেন, তার শোকে কাঁদছেন পাত্রমিত্ররা—সুখসদনে বসে এ কান্না—কান্নার গভীরতাকে চিনিয়ে দিয়েছে সহজেই। সাদার পাশে কালোকে রেখে তার নিকষ ঘনত্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর মতো এ কাব্যকৌশল বাংলা কাব্যে মধুসূদনের পাশ্চাত্ত্য-প্রজ্ঞার অবদান। বলা বাহুল্য যে এতে রাবণের জীবনের দুর্বিপাকটাকে পাঠক ধরে নিতে পেরেছেন সহজেই।

এ প্রসঙ্গে স্মরণ্য আরো একটি বিষয়। বৈভবময়ী লঙ্কানগরী—রাবণের রাজসভা যার সারাৎসার, সেটাই রক্ষপক্ষীয়দের মর্যাদা-চিহ্ন। মেঘনাদ, প্রমীলা, মন্দোদরী, বীরবাহুএমন কি বিভীষণও যে রাজকীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত, এ মর্যাদার নেপথ্য নির্মাতা ঐশ্বর্যময় ঐ রাজসভাই। সুতরাং এ রাজসভার বর্ণনা কাব্যপক্ষে ছিল অত্যাবশ্যক এবং সেটা একেবারে কাব্যের শুরুতেই। কাব্যের শুরুতেই এ বর্ণনা না থাকলে সারা কাব্যে সে তার যথোপযুক্ত নির্যাস সংবাহিত করতে পারত না।

অতএব, রাবণের রাজসভা বর্ণনার দক্ষতায়, কৌশলে এবং যথাস্থানে তার সন্নিবেশে মধুসূদন যে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন তা প্রশংসার যোগ্য।