-->

কাব্যতত্ত্ব || সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর || দ্বিতীয় পর্ব

কাব্যতত্ত্ব:

কাব্যতত্ত্ব || সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর || দ্বিতীয় পর্ব

 

১. মহাকাব্য কাকে বলে? মহাকাব্য কয়প্রকার ও কি কি?

উ: বিশ্বনাথ কবিরাজ ‘সাহিত্য দর্পণ’ এ মহাকাব্যের সংজ্ঞায় বলেন—

সর্গ বন্ধো মহাকাব্যং তত্রৈকো নায়কঃ সুরঃ।

সদ্বংশ ক্ষত্রিয়োবাহপি ধীরো দাত্তগুান্বিতঃ।।

অর্থাৎ মহাকাব্য হবে সর্গবন্ধে বিভাজিত নায়ক হবে দেবতা বা সৎকুলজাত, ধিরোদাত্ত গুণসম্পন্ন। রস হবে শৃঙ্গার বীর বা শান্ত এবং ঘটনা কোনও ইতিহাস বা পুরাণ থেকে সংকলিত হবে।

২. প্রাচ্য মতে মহাকাব্যের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ?

উ: বিশ্বনাথ কবিরাজ কৃত বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

১) মহাকাব্যের নায়ক হবে ধীরোদাত্ত গুণ সমন্বিত কোনও দেবতা বা উচ্চবংশ জাত নৃপতি।

২) কমপক্ষে ন’টি ও সর্বাধিক তিরিশটি সর্গে মহাকাব্য বিভক্ত হবে।

৩) শৃঙ্গার, বীর ও শান্ত রসের একটি প্রধান হবে। অন্যগুলি প্রধান রসের অঙ্গীরস।

৩. মহাকাব্যের নায়ক কেমন হয়? মহাকাব্য কয়টি সর্গে রচিত হয়? মহাকাব্য কোন রসে রচিত হয়?

উ: মহাকাব্যের নায়ক হবেন—ধীরোদাত্ত

মহাকাব্যের সর্গ সংখ্যা—সর্বনিম্ন ন’টি ও সর্বাধিক তিরিশটি।

মহাকাব্যের রস হবে-শৃঙ্গার, বীর ও শান্ত।

৪. মহাকাব্যের মুখ্যফল ও বিষয় কি হবে?

উ: মহাকাব্যের মুখ্যফল হল—ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষের মধ্যে যে কোন একটি।

মহাকাব্যের বিষয় হবে—দুর্জনের নিন্দা ও সাধু বা সজ্জনের প্রশংসা।

৫. দৃশ্যকাব্য কাকে বলে?

উ: যে কাব্য রঙ্গভূমিথে নট-নটী দ্বারা অভিনীত হয় তাকে দৃশ্যকাব্য বলে।

৬. খণ্ডকাব্য কাকে বলে? খণ্ডকাব্যের অপর নাম কি?

উ: মহাকাব্য অপেক্ষা অল্পায়ত ক্ষুদ্র কাব্যকে খণ্ডকাব্য বলে। যথা—‘মেঘদূত’, ‘শকুন্তলা’, ঋতুসংহার’ প্রভৃতি খণ্ডকাব্য।

খণ্ডকাব্যের অপর নাম—গীতিকাব্য।

৭. কোষ কাব্য কাকে বলে?

উ: যে কাব্যে বিভিন্ন কবির কবিতা সংকলিত হয়েছে তাকে কোষকাব্য বলে। যেমন—‘কবীন্দ্রবচন সমুচ্চয়’, ‘সদুক্তিকনামৃত’।

৮. শতক কাব্য কাকে বলে? উদাহরণ দাও?

উ: পদ্যকাব্যের অর্ন্তগত শত শ্লোকেরচিত শতককাব্য নামে এক শ্রেণীর কাব্যকে শতক কাব্য বলে। যেমন—‘অমরুশতক’, ‘শৃঙ্গারশতক’, ‘বৈরাগ্যশতক’।

৯. গদ্যকাব্য কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উ: যে কাব্য গদ্য আকারে লেখা যার প্রধান উদ্দেশ্য নীতিশিক্ষা দেওয়া তাকে গদ্যকাব্য বলে। যেমন—বিষ্ণুশর্মা রচিত ‘পঞ্চতন্ত্র’

সোমদেবের রচিত ‘কথাসরিৎসাগর’

ক্ষেমেন্দ্র রচিত ‘বৃহৎকথামঞ্জুরী’

গুণাঢের রচিত ‘বৃহৎকথা’।

১০. চম্পুকাব্য কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উ: গদ্যপদ্য মিশ্রিত এক শ্রেণীর কাব্য চম্পু নামে পরিচিত উল্লেখযোগ্য কাব্য হল চম্পু কাব্য।

যেমন—ত্রিবিক্রম ভট্টের লেখা ‘নলচম্পু’ ও ‘মদালসাচম্পু’।

১১. প্রাচীন মহাকাব্য রচয়িতার নাম লেখ?

উ: কালিদাস, অশ্বঘোষ, ভারবি।

১২. প্রাচীন খণ্ডকাব্য রচিয়তার নাম লেখ?

উ: কালিদাস।

১৩. কোষকাব্য রচয়িতা দুজন কবির নাম লেখ?

উ: শ্রীধরদাস, জহ্নন, রূপ গোস্বামী।

১৪. ‘শব্দার্থৌ সাহিতৌ কাব্যম’—উক্তিটির স্রষ্টা কে?

উ: ভামহ। তিনি প্রথম কাব্যের সংজ্ঞা দিয়েছেন।

১৫. ‘রসাত্মক বাক্যং কাব্যম’—উক্তিটির স্রষ্টাকে

উ: বিশ্বনাথ কবিরাজ।

১৬. কোন আলঙ্কারিক কাব্য অর্থে সাহিত্য শব্দটি প্রথম প্রয়োগ করেন?

উ: রাজশেখর।

১৭. ‘রীতিরাত্মা কাব্যস্য’—উক্তিটির স্রষ্টাকে?

উ: বামন।

১৮. কাব্য দেহে অলংকার ও মানব দেহে অলংকার এরমধ্যে মিল কোথায়?

উ: উভয় বস্তুই বাহ্যিক সৌন্দর্য প্রদান করে।

১৯. ‘কাব্যের মূল রূপ হল বক্রোক্তি, এই বক্রোক্তিই কাব্যের প্রাণ’—কে বলেছেন?

উ: কুন্তক।

২০. ভারতীয় কাব্য তত্ত্বের আদি গুরু কে?

উ: ভরত।

২১. ঔচিত্যকে কাব্যের আত্মা বলে কে বলেছেন? তিনি নিজেকে কি বলেছেন?

উ: ক্ষেমেন্দ্র। তিনি নিজেকে ‘ব্যাসদাস’ বলেছেন।

২২. বামন কাব্যতত্ত্ব আলোচনায় কবিদের দুটি ভাগে করেছেন কি কি?

উ: দুটি ভাগ হল—আরোচকী, সতৃণভোজী।